শীতকালীন সবজির উপকারিতা-সবজি চাষের সময় সূচি জেনে নিন ।

প্রিয় পাঠক আপনি কি শীতকালীন সবজির উপকারিতা এবং সবজি  চাষের সময় সূচি জানতে চাচ্ছেন, কিন্তু কোথাও খুজে পাচ্ছেন না ? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনি পরতে পারেন । এই আর্টিকেলে শীতকালীন সবজি চাষের পদ্ধতি  সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে । এই বিষয়ে সকল তথ্য জানতে  আর্টিকেলটি পুরোটা মন দিয়ে পড়ুন । 


আমাদের বাংলাদেশ ঋতুবর্তি দেশ ।  ছয়টি ঋতু নিয়ে বাংলাদেশের ঋতু চক্র  চলমান থাকে । এবং বাংলাদেশে একেক ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয় । শীতেও নানান রকমের সবজি এবং ফসল চাষ করা হয় । 

ভুমিকা

বাংলাদেশ ৬  ঋতুর দেশ । এই ৬ টি ঋতুর মধ্যে ৫ নাম্বার ঋতু হলো শীত ।  এই শীত ঋতুকে কেন্দ্র করে আমাদের বাংলাদেশে অনেক রকমের ফসল ফলানো হয় । আর এই শীতকালীন ফসল গুলো দিয়ে শীতকালীন সবজির চাহিদা গুলো পুরন করা হয় । শীতকাল হলো ফসল উৎপাদনের খুব ভালো একটি মৌসুম । 

এই মৌসুমে অনেক ধরনের ফসল দেখতে পাওয়া যায়  । গ্রামের  মাঠ গুলো শীতকালীন ফসলে ভরে ওঠে । এছাড়াও শীতকালীন সবজিতে রয়েছে অনেক পুষ্টি ও গুনাগুন । যা আমাদের জন্য খুবি উপকারি ।

আরও পড়ুন ঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে কেক বানানোর উপায় বিস্তারিত জেনে নিন ।

শীতকালীন সবজির উপকারিতা

আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক কিছুরই পরিবর্তন দেখা যায় । তার মধ্যে আসলে পরিবর্তন দেখা যায় । আমাদের বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ । এই ছয়টি ঋতুতে বাংলাদেশের মাঠে জমিতে অনেক রকমের ফসল সবজি চাষ করা হয় । এখন আমাদের বাংলাদেশের শীতকাল চলছে । আর এই শীতকালে নানান রকমের শাক-সবজির সমারোহ দেখা যাচ্ছে । 

শীতকালে আমাদের বাংলাদেশে অনেক রকমের সবজি চাষ করা হয় । যেমন, আলু, গাজর, মুল, ফুলকপি, বাঁধাকপি বেগুন ইত্যাদি সবচেয়ে চাষ হয় । আর প্রতিটি সবজির আলাদা আলাদা গুনাগুন রয়েছে । আর এসব শাকসবজি খাওয়ার উপকারিতা অনেক ।  সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো । 

গাজর ঃ গাজার একটি সুস্বাদু খাবার । এটাকে এক ধরনের ফল ও বলা যায় । গাজর খেলে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব । এই গাজরে রয়েছে ভিটামিন এ , ভিটামিন বি , ভিটামিন সি , এছাড়া অনেক পুষ্টিকর প্রোটিন ও ক্যালোরি রয়েছে । 

মুলা ঃ মুলা হলো বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় খাবার । এ মূলা সাধারণত গ্রামের হাটে বাজারগুলোতে এবং জমিতে চাষ করতে দেখা যায় । সাদা মোলার ভেতরে রয়েছে ভিটামিন সি , ম্যাগনেসিয়াম , পটাশিয়াম , সোডিয়াম সহ আরো অনেক ভিটামিন । যা মানুষের শরীরকে শীতকালে চাঙ্গা এবং হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে । 

এছাড়াও জর ও ফ্লো এর মত রোগের সঙ্গে মোকাবেলা করতে সহায়তা করে । এছাড়া বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । 

ফুলকপি ঃ ফুলকপি হলো একটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি । যা শীতকালে খুব সুন্দর ভাবে মানুষের কাছে উপস্থিত হয়ে যায় এবং খাবারের পুষ্টি  বৃদ্ধি করে । ফুলকপির মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি , যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে বিশেষভাবে সহায়তা করে । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং নিয়মিত সুস্থ থাকতে ফুলকপি খাওয়া অপরিহার্য । 

সবজি চাষের সময় সূচি

আমাদের এ বাংলাদেশকে বলা হয় কৃষি প্রধান দেশ । এ কৃষি প্রধান দেশে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে শাকসবজি এবং ফসল ফলাদিও পরিবর্তন হতে থাকে । একেক সময় একেক রকমের শাকসবজি চাষ করে থাকে কৃষকরা । কৃষকদের এই বিশেষ চাষবাস মানুষের দৈনন্দিন খাবারের চাহিদা মেটাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । 

বৈশাখ মাসে চাষকৃত সবজি 

বৈশাখ ( এপ্রিল-মে )  বৈশাখ মাস হল একটি বাংলা মাস । আর এপ্রিল মেয়ে হলে ইংরেজি মাস । এপ্রিল ও মে মাসকে নিয়ে ই বৈশাখ মাস তৈরি । বৈশাখ মাসের সবজি গুলো হল ঃ

  • লাল শাক , কলমি, ব বেগুন , ঢেঁড়স, ডাঁটা, পাট   এবং মরিচ চাষের উপযুক্ত সময় । এ সময়ে এই শাকসবজি গুলোর বীজ বপন করার জন্য উত্তম সময় । 
  • এ সময়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা রোপন করার জন্য উপযুক্ত সময় ।
  • কুমড়া , ঝিঙ্গা , শশা ইত্যাদি এ সময় চাষ করা হয় ।
জৈষ্ঠ মাসে চাষক্রিত সবজি

( মে-জুন ) ইংরেজি মে জুন এই দুই মাস নিয়ে বাংলা জৈষ্ঠ মাস তৈরি । জৈষ্ঠ্য মাসের চাষকৃত সবজিগুলো হলোঃ
  • এ সময়ে সবজি চাষ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে সবজির চারা রোপন এবং শেষ প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে
  • ঝিঙ্গা পটল কাঁকরোল এসবের বীজ রোপন করতে হবে এবং পোকামাকড় যেন বৃদ্ধি না পায় সে কারণে সার ব্যবহার করতে হবে । 
  • জমি ভালোভাবে প্রস্তুত করে বীজ রোপন করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে । 
আষাঢ় মাসের সবজি চাষ
( জুন-জুলাই) জুন ও জুলাই মাস একত্রিতা হয়ে তৈরি হয় আষাঢ় মাস ।

  • এই সময়ে গ্রীষ্মকালের চাষকৃত টমেটো বেগুন সিমের বীজ কমলা জাতীয় সবজির পোকামাকড় দমন করতে হবে । 
  • অগ্রিম টমেটো, ঢেড়স, ও বেগুন থেকে ফসল সংগ্রহ করতে হবে ।
  • যেসব ফসল মাচাতে তৈরি হয় সেসব সবজির জন্য মাচা তৈরি করতে হবে ।
শ্রাবণ মাসে সবজির প্রস্তুতি 
( জুলাই-আগস্ট ) জুলাই ও আগস্ট মাস নিয়ে গঠিত হয় শ্রাবণ মাস ।

  • এ সময় ফুলকপি বাঁধাকপি লাউ বেগুন ইত্যাদির জন্য বীজ বপন করতে হবে । তারপর সেগুলো উপযুক্ত সময় জমিতে চাষ করতে হবে । 
  • শিম,  লাল শাক -  পালং শাক এসবের বীজ বপন করতে হবে শ্রাবণ মাসে । 
  • এসব ফসল চাষের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এবং যেসব ফসলে মাচা বা খুঁটি দিতে হয় সেগুলোতে মাচা ও খুটির ব্যবস্থা করতে হবে । 

ভাদ্র মাসের প্রস্তুতি
( আগস্ট- সেপ্টেম্বর ) আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস নিয়ে গঠিত হয়  ভাদ্র মাস । 

  • এ সময়টাতে ফুলকপি, বাঁধাকপ্‌ টমেটো ,বেগুন ইত্যাদি সবজিতে প্রয়োজনমতো সার ব্যবহার করতে হবে । 
  • যেসব ফসল গুলো আগে লাগানো হয়েছিল সেগুলোর ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হবে এবং সুন্দরভাবে যত্ন নিতে হবে । 
আশ্বিন মাসের প্রস্তুতি
( সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ) সেপ্টেম্বরের শেষ এবং অক্টোবরের শুরুর দিকে আসেন মাসের আগমন ঘটে ।

  • সিম ,লাউ, বরবটি ইত্যাদি চাষের জন্য মাচা তৈরি করতে হবে ।
  • পেঁয়াজ রসুন লাগানোর জন্য বীজ বপন করতে হবে । 
  • এবং আলু চাষ করতে হবে ।
কার্তিক মাসে যা যা করতে হবে
( অক্টোবর-নভেম্বর) অক্টোবর নভেম্বর নিয়ে কার্তিক মাস । 

  • রবি সবজির পরিচর্যা ও আলোর কেল বাধার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে । 
  • এসব সবজি গুলোতে সেচ দিতে হবে । 
  • ফুলকপি ,বাঁধাকপির গোঁড়া পরিষ্কার এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হবে । 
অগ্রহায়ণ মাসের প্রস্তুতি
( নভেম্বর-ডিসেম্বর ) নভেম্বর ও ডিসেম্বর নিয়ে অগ্রহায়ণ মাসের আগমন । 

  • পেঁয়াজ, রসুন এর ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হবে, এবং মিষ্টি আলুর লতা রোপন করতে হবে ।
  • অন্যান্য আগে যেসব ফসলগুলো লাগানো হয়েছে সেগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে ।
  • ফসলগুলোতে পরিমাণ মতো সার ব্যবহার করতে হবে । 
পৌষ মাস
( দিসেম্বর-জানুয়ারি )

  • মধ্যম রবি ও আগাম চাষ করা সবজির পোকা মাকড় দমন করতে হবে ।
  • ফল গাছের পোকা মাকর দমন করতে হবে ।
মাঘ মাস 
( জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি )

  • বীজ রোপণ  ও চারা সংগ্রহের জন্য সচেতন হতে হবে জাতে সঠিক সময়ে সঠিক বীজ বপন করা যায় ।
  • ফল ও সবজির দেখাসনা ও পোকা মাকর থেকে মুক্তির উপায় অবলম্বন করতে হবে। 

ফালগুণ মাস

( ফেব্রুয়ারি- মার্চ )

  • এই সময়ে উপজুক্ত জমি নির্ধারণ করতে হবে।
  • আলু চাষ করতে হবে এবং আলু লাগানর ১০০ দিন পর আলু তুলতে হবে ।
চৈত্র মাস
(মার্চ-এপ্রিল )
  • এসময়ে ধান চাষ করতে হয় । 
  • এটি ২৮ ধান ৭৯ এবং কালছিনা ধান চাষের মুল সময় । 
  • এ সময়ে অনেক ফসল ঘরে তুলতে হয় ।

শীতকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি


শীতকালে অনেক ধরনের সবজি চাষ করা হয় । শীতকাল যখন আমাদের মাঝে আগমন ঘটে তখন এক অন্যরকম আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ পায় মনের মধ্যে । আর এ সময় নানারকম ফসল , শাক সবজি তে ভরে ওঠে গ্রামে গঞ্জের মাঠ গুলো এবং হাটে বাজারের দোকানপাটগুলো । এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে তোলে শীতকালীন সবজি । 

শীতকালে যে সকল সবজিগুলো উৎপন্ন হয় সেগুলো হলোঃ
আলু, বেগুন, পেঁয়াজ , মোলা , গাজর , ফুলকপি , বাঁধাকপি , পালং শাক , লাল শাক এ ছাড়া আরো অনেক শাক সবজির চাষ করা হয় এই শীতকালীন সময়ে । শীতকালীন সময়ে নদীর তীরবর্তী অঞ্চল গুলোতে চাষ করতে একটু সময় সমস্যা পড়তে হয় ।

কারণ এ সময় নদীর পানি শুকিয়ে আসে । এবং ফসলে সেচ দিতে সমস্যা হয় । সে কারণে উপযুক্ত জায়গা দেখে ফসল চাষ করতে হবে যেখানে সব সময় পানি পাওয়া যাবে এবং শেষ প্রদানে কোন সমস্যা হবে না । এই শীতের সময়ে শীতকালীন যে সব সবজি উৎপাদন হয় সেই সব সবজির বীজ সংগ্রহ করতে হবে এবং জমি দেখে সেগুলো চাষ করতে হবে । 

শীতকালীন ফসল কি কি

শীতের মৌসুমে বা রবি মৌসুমে সব থেকে বেশি শাকসবজি চাষ করা হয় । আশেপাশের জমিগুলো শাক-সবজিতে ভরে ওঠে । এর মধ্যে কুয়াশার ভেতর দিয়ে কৃষকরা ফসল এবং শাকসবজি তুলে নিয়ে আসে এবং সেগুলো বাজারজাত করে । এসব শাকসবজি উৎপাদন করে কৃষকরা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে । 

তো জেনে নেওয়া যাক শীতকালীন ফসল গুলো কি কি ঃ

  • শীতকালে আলুর চাষ করা হয়
  • ফুলকপি
  • বাঁধাকপি 
  • বেগুন
  • টমেটো
  • মূলা
  • গাজর
  • লাউ
  •  কুমড়া
  • লাল শাক
  • পালং শাক
এই উপরোক্ত ফসল গুলো ও সবজিগুলো ছাড়াও আরো অনেক শাকসবজি চাষ করে থাকে আমাদের দেশের কৃষকরা । এবং তাদের এই বিশেষ অবদানের কারণেই আমাদের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয় এবং সেগুলো বাজারজাত করে কৃষকরা তাদের নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন । 

শীতকালীন শাকের নাম

শীতকালীন সময়ে বাংলাদেশ ে সবজির পাশাপাশি অনেক ধরনের শাক চাষ করা হয় । এসব শাক খেতে যেমন সুস্বাদ তেমনি পুষ্টিকর । এই শাক এর ভেতর রয়েছে নানা রকম পুষ্টি ও ভিটামিন যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের যেসব ভিটামিনের ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করে দেয় ।

শীতকালীন সময়ে আমাদের দেশে যেসব শাক চাষ করা হয় সেগুলো হলঃ

  • লাল শাক
  • পালং শাক
  • কচুর শাক
  • কলমি  শাক
  • পুঁই শাক
এছাড়াও আরও অনেক শাক চাষ করা হয় । আর এসব শাকে রয়েছে অধিক পরিমানে ভিটামিন এবং পুষ্টিকর ক্যালোরি । যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এবং ভিটামিনের ঘাটতি পুরন করে দেয় ।

শেষ কথা

 
 প্রিয় পাঠক আশা করি শীতকালীন সবজির উপকারিতা গুলো কি কি সেগুলো জানতে পেরেছেন এবং এর পাশাপাশি সবজি চাষের পদ্ধত্তি গুলো কি কি তা জানতে পেরেছেন । আশা করছি আপনারাও আপনাদের আশেপাশে শাক সবজির চাষ করবেন এবং সুস্থ সবল থাকবেন ।

 একটি জনসুন্দর দেশ গরে তুলবেন। এই আর্টিকেলটি থেকে যদি কিছু জানতে পারেন তাহলে অবশ্যয় অন্যকে জানিয়ে দিবেন এই বিষয়ে ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url