দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি-রূপচর্চায় ঘি এর ব্যবহার

প্রিয় পাঠক আপনি কি দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি গুলো কি কি তা জানতে চাচ্ছেন ?  হয়ত কোথাও সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না । তাহলে আপনি এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন । এই আর্টিকেলে ঘি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে  । এবং রূপচর্চায় ঘি এর ব্যাবহার সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে । 


আপনি যদি এই সকল বিষয়ে জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন । এবং ঘি সম্পর্কে অজানা তথ্য জেনে নিন । 

পোস্ট সূচিপত্র ঃ এখান থেকে যে সকল পোস্ট গুলো পড়তে চান নিচে ক্লিক করুন । 

ভুমিকা 

ঘি হলো একটি উপকারি খাবার । এবং পুষ্টি সম্পন্ন একটি খাবার । ঘি মূলত তৈরি করা হয় গরুর খাটি দুধ দিয়ে । এই উপকারি খাবারটি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে । কি কি উপকার পাওয়া যাবে তা নিচে বর্ণনা করা হয়েছে । এবং গরুর খাটি দুধ থেকে কিভাবে ঘি বানাতে হয় এই বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছি এই আর্টিকেলের মধ্যে । 

তো পাঠকগণ চলুন জেনে নেওয়া যাক ,  কিভাবে দুধ থেকে ঘি বানাতে হয় সেই বিষয়ে । এবং ঘি বানানোর রেসিপি গুলো কি কি সে বিষয়ে ।   

দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি

ঘি একটি উপকারি খাবার । এই উপকারে খাবারটি আপনি চাইলে বাড়িতে বসেই তৈরি করে নিতে পারেন । অনেক সময় আমরা বাজার থেকে ঘি কিনে আনি । কিন্তু খাটি ঘি বাজারে পাওয়া যায় না । সেজন্য আপনি চাইলে বাসাতেই ঘি তৈরি করতে পারবেন । এবং খাটি ঘি তৈরি করে চাইলে আপনি বিক্রিও করতে পারবেন । 

ঘি বানানোর জন্য প্রথমে ঘি সম্পর্কে জানতে হবে । যদি ঘি কিভাবে বানায় সেটা না জানেন তাহলে আপনি কখনোই খাঁটি ঘি তৈরি করতে পারবেন না । তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে ঘি বানাবেন দুধের সর দিয়ে এবং কি কি উপকরণগুলো লাগবে ঘি তৈরি করতে । 

ঘি তৈরি করতে যে সকল উপকরণগুলো লাগবে সেগুলো হলো ঃ 

  • এক বাটি দুধের সর লাগবে
  • ঠান্ডা পানি লাগবে এক লিটার
  • এবং পরিষ্কার পাত্র

এর সকল উপকরণ গুলো প্রথমে জোগাড় করে নিতে হবে । আপনাকে দুধের সর সংরক্ষণ করে রাখতে হবে । গরম দুধ এর উপর যে সর পড়ে সে সর নিয়ে তা ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে হবে । কারণ পরিমাণ মতো সর না হলে ঘি তৈরি করা যাবে না । তারপর আপনাকে সেই সরগুলো ভালোভাবে মথে নিতে হবে ।  

এটা আপনি চাইলে ব্লেন্ডারে করতে পারেন অথবা কাটা চামচ কিংবা শিলপাটার মাধ্যমে করতে পারেন । সে সরগুলো ব্লেন্ডার করা হয়ে গেলে তাতে এক লিটার পরিমাণ ঠান্ডা পানি ঢেলে দিতে হবে । এরপর সে পানি থেকে সরগুলো উঠিয়ে নিতে হবে । যখন সেগুলো পানিতে দিবেন তখন সেগুলো গোটা হয়ে যাবে। ঠিক রুটি বানানোর আটার মত। 

এবার সেই সর গুলো একটি ফ্রাই প্যানে বসিয়ে দিতে হবে । ফ্রাই প্যান টি মাটির চুলায় অথবা গ্যাসের চুলায় বসিয়ে দিতে হবে । তারপর পেন গরম হওয়ার আগেই তাতে সর গুলো বসিয়ে দিতে হবে । এবার সেগুলো জাল দিতে হবে এবং কাঠি অথবা চামচ দিয়ে নাড়াতে হবে । যাতে করে সেগুলো কড়াইয়ে বা প্যানে লেগে না যায় । 

এভাবে কিছুক্ষণ নাড়ানোর পর এটার কালার পরিবর্তন হতে থাকবে। এবং তা থেকে ফ্যানার মতো অংশ তৈরি হবে । এইভাবে নাড়াতে নাড়াতে একসময় সেগুলো ঘি হতে থাকবে । সেগুলো ঘি হতে শুরু হবে এবং বাকি যে অংশগুলো রয়েছে সেগুলো ভেসে উঠবে । সেগুলো জাল দিতে দিতে একসময় বাদামি রঙে পরিণত হবে । 

এবার একটি পাত্র ে সেগুলো পরিষ্কার ছাকনি নিয়ে ছেকে নিতে হবে । যেগুলো ভেসে উঠছিল ফেনার মত সেগুলো চাকরিতে আটকে যাবে এবং যেটা খাঁটি ঘি সেটা রয়ে যাবে । যখন সেগুলো পাত্রে ঢালা হয়ে যাবে তখন সেগুলো খোলা অবস্থাতেই রেখে দিতে হবে । কেননা সে ঘি গরম অবস্থায় রাখা যাবে না । 

এভাবে আপনি বাসাতে বসে দুধের সর দিয়ে ঘি তৈরি করতে পারবেন । আপনি চাইলে বাসাতে বসে না থেকে এই উপকারি খাবারটি তৈরি করতে পারেন । 

রূপচর্চায় ঘি এর ব্যবহার

আমরা সকলেই ঘি খাদ্য হিসেবে চিনি । খাবারের এই উপাদানটি রূপচর্চাতেও ব্যবহার করা হয় সে বিষয়ে আমরা হয়তো সকলে জানিনা । রূপচর্চায় ঘি এর ব্যবহার করা যায় । এ বিষয়ে যদি জানা না থাকে তাহলে চলুন জেনে নেই। রূপচর্চায় ঘি এর ব্যবহার সম্পর্কে । 

আমরা প্রায় একটা বিষয় দেখতে পাই সেটা হল অল্প বয়সে চামড়া কুচিয়ে যাওয়া । এবং অল্প বয়সে ত্বকে বয়সের ছাপ । সমস্যাটির সমাধান পেতে চাইলে আপনি ঘি ব্যবহার করতে পারেন । খাদ্যের তালিকায় যদি ঘি রাখেন তাহলে আপনি এই সমস্যার সমাধান পাবেন নিশ্চয় । 

ত্বকের ময়েশ্চারাইজ 

ঘি অত্যধিক পুষ্টিকর খাবার । এতে ভিটামিন এ এবং প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় । যা প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজার কাজ করে । এটি ত্বকের দীর্ঘ সময় ধরে হাইড্রেশন প্রদান করেন । যা তক  সুন্দর রাখতে সাহায্য করে । এবং ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর করে দেয় । ঘি ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে নরম এবং কমল । 



ঠোঁটের ফাটা দূর করে

আমরা দেখতে পাই যে অনেক মানুষের ঠোঁট ফেটে যায় । বিশেষ করে এই সমস্যাটি দেখা যায় শীতের কারণে । এতে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে এ সমস্যাটি বেশি দেখা যায় । আপনি যদি সামান্য পরিমাণ ঘি আঙ্গুলে নিয়ে আপনার ঠোঁটে দেন তাহলে আপনার ঠোঁট ফাটা দূর হবে এবং ঠোঁট দেখতে সুন্দর লাগবে । 

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করে 

চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে ঘি ব্যবহার করা যেতে পারে । প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে চোখের যে অংশ কালো হয়ে আছে সে অংশে যদি ঘি লাগিয়ে ঘুমিয়ে যান । এবং সকালে উঠে পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন । নিয়মিত এই কাজটি করলে আপনার চোখের নিচে কালো দাগ দূর হয়ে যাবে । 

আরও পড়ুন ঃ খাওয়ার কতক্ষন পর ব্যায়াম করা উচিত বিস্তারিত জানুন

গাওয়া ঘি এর উপকারিতা 

হয়তো অনেকে মনে করবেন যে গাওয়া ঘি কাকে বলে । মূলত গরুর দুধ দিয়ে যে ঘি তৈরি করা হয় তাকে বলা হয় গাওয়া ঘি । এই গাওয়া ঘি এর উপকারিতা অনেক । কারণ ঘি তে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ফেটি এসিড । যা শরীরে অনেক উপকার করে ।  এ ঘি এর বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে সেগুলো হলো ঃ 

  • অনেকে হয়তো মনে করে যে ঘি খেলে মোটা হয়ে যাবে । আসলে এ কথাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয় । ঘি খেলে অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে । 
  • নিয়মিত যদি ভাতের সাথে ঘি খাওয়া যায় তাহলে হার্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব । কারণ ঘি হার্টের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে । 
  • ঘি খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায় । এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় । 
  • চোখের জ্যোতি বাড়াতে গিয়ে একটি অন্যতম খাদ্য উপাদান । অনেকে চোখে কম দেখে বা ঝাপসা দেখে । তারা নিয়মিত ঘি  খেতে পারেন । 
  • ঘি শুধু শারীরিক সমস্যার সমাধান দেয় তা কিন্তু নয় । ঘি মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে । 
এ সকল উপকারিতা গুলো পাওয়া যায় গাওয়া ঘি খাওয়ার মাধ্যমে । এবং গাওয়া ঘি ব্যবহার করার ফলে । এ সকল উপকারিতা গুলো পেতে নিয়মিত খাবারের তালিকায় ঘি রাখুন । 

ঘি এর ক্ষতিকর দিক 

যে সকল খাবারগুলো দুগ্ধ যাত , তার মধ্যে ঘি হল অন্যতম একটি খাবার । দামি এবং আভিজাত্য খাবারের মধ্যে ঘি একটি । ঘি এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও গুনাগুন । যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী । আমরা সকলে জানি অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয় । ঠিক তেমনি ঘি যদিও পুষ্টিকর খাবার তবুও এটা মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করা হলে সমস্যার দেখা যায় । 

ঘিকে সোনার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে । অর্থাৎ ঘি কে বলা হয় তরল সোনা । কারণ এটার পুষ্টি ও গুনাগুন যেমন অতিরিক্ত ঠিক তেমনি এটার আভিজাত্য এবং দামও অনেক বেশি । এই শোনার মত খাবার অতিরিক্ত খেলে পারে অনেক ক্ষতি হতে পারে । যে সকল ক্ষতিগুলো হয় সেগুলো হলো ঃ

  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কি ক্ষতিকর । কারণ ঘি স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় । তবে এটা সকলের ক্ষেত্রে নয় যাদের ডায়াবেটিস এর পরিমাণ বেশি তাদের জন্য । 
  • অতিরিক্ত ঘি খেলে বমি বমি ভাব দেখা দেয় । 
  • ঘি এর মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে গেলে শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যায় । ফলে হৃদরোগ জনিত সমস্যা সৃষ্টি হয় । 
  • ঘি অতিরিক্ত খেলে শরীরের চর্বি জমে যায় । কারণ কি একটি চর্বি জাতীয় খাবার এবং এতে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড । 
  • ঘি অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয় । এবং তার সাথে সাথে পেট ফাঁপা অনুভব হয় । 
  • ঘি ঘি হাড়ের সমস্যার সমাধান দেয় । তবে এটা যদি অতিরিক্ত হয়ে যায় বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে । 

ঘি এর পুষ্টি উপাদান 


ঘি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং উপকারি খাবার । এই ঘি মূলত তৈরি করা হয় দুধের সর দিয়ে । দুধে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন থাকে । এবং সেই  দুধ থেকে তৈরি কৃত ঘি , এটাতেও প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি এবং ভিটামিন থাকে । যা শরীরে রোগ প্রতিরোধসহ অনেক উপকার করে ।  এতে অনেক ভিটামিন রয়েছে এবং পুষ্টি উপাদান রয়েছে । 

ঘি এর যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক । 

ভিটামিন এ

ঘি এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ । ভিটামিন এ শরীরের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে । এবং রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে । 

ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট নিয়ন্ত্রণ করে থাকে । এই ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট দেহের হাড়ের ক্ষয় রোধ করে । 


কনযোগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড 
 
ঘি এর মধ্যে কনজুগেটেড লেনোলিক এ এসিড টি  বিদ্যমান থাকে । যা দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে । 

এছাড়াও ঘি এর মধ্যে রয়েছে ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়রন সহ আরো অনেক ভিটামিন এবং পুষ্টিকর উপাদান । যা দেহের অনেক উপকার করে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে । এজন্য উচিত নিয়মিত পরিমাণমতো ঘি খাওয়া । 


লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠকগণ আশা করছি যে আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি এবং রূপচর্চায় ঘি এর ব্যাবহার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন । এই আর্টিকেলটি থেকে যদি কিছু জানতে পারেন অথবা যদি কোন প্রকার উপকৃত হয়ে থাকেন , তাহলে অবশ্যয় সেয়ার করবেন । এবং অন্যকে জানার জন্য সাহায্য করবেন । 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url