সরকারিভাবে পাইলট হওয়ার উপায় - ২০২৪

প্রিয় পাঠক, আপনারা জানতে চাচ্ছেন যে সরকারিভাবে কিভাবে পাইলট হওয়া যায় ? আপনাদের এই সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন আজকের এই আর্টিকেলে । এই আর্টিকেলে সরকারিভাবে পাইলট হওয়ার উপায় - ২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । 

 

অনেকের স্বপ্ন থাকে যে নিজেকে পাইলট হিসেবে আকাশে উড়তে দেখতে চাই । কিন্তু পাইলট হওয়ার আগে যে সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে এবং যে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে তার সকল কিছু জানতে পারবেন এই আর্টিকেল এর মধ্যে । 

পোস্ট সূচিপত্র ঃ এই পোস্টের বিভিন্ন অংশ পড়তে চাইলে নিচে ক্লিক করুন । 

 বাংলাদেশে পাইলট হওয়ার যোগ্যতা

বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিমান সংস্থা রয়েছে । যেগুলো ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স তাদের নিজস্ব অর্থায়নের ধারা তরুণদের যুক্তরাষ্ট্রে এবং ভারতে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে । এবং প্রশিক্ষণ এর পাশাপাশি এয়ারক্রাফট মেইনটেন্স ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন । 

স্টুডেন্ট পাইলট পদে আবেদনের যোগ্যতা

যে সকল স্টুডেন্ট পাইলট পদে আবেদন করতে চান তাদের যে সকল যোগ্যতা সমূহ থাকতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো ঃ 

  • স্টুডেন্টকে অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগের হতে হবে । 
  • এসএসসি ও এইচএসসি তে জিপিএ ৫ থাকতে হবে । বিশেষ করে ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিতে জিপিএ ৫ থাকতে হবে । 
  • বিজ্ঞানসহ ন্যূনতম ৫ টি বিষয়ে গ্রেড ৫ থাকতে হবে । 
  • পাইলট পদে আবেদনকারীকে অর্থাৎ প্রার্থীকে অবশ্যই ইংরেজিতে দক্ষ ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে । 
  • প্রার্থীকে অবশ্য বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে । 
  • প্রার্থীর বয়স হতে হবে ১৭ থেকে ২৫ বছর । এর উর্ধ্বে বয়স হলে তা গণ্য করা হবে না । 
  • প্রার্থীর যদি স্নাতক পাস থাকে তবে সেটাকে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে । 

উচ্চতা এবং মেডিকেল রিপোর্ট 

  • যদি পাইলট পদে আবেদন করি একজন মেয়ে হয়ে থাকে তবে তার উচ্চতা হবে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি । 
  • এবং প্রার্থী যদি একজন ছেলে হয় তবে তার উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হতে হবে । 
  • আবেদনকারীদের অবশ্যই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে । এবং মেডিকেল সার্টিফিকেট সম্পূর্ণ সঠিক হতে হবে । 
  • আবেদনকারীদের দৃষ্টি শক্তি হতে হবে ৬/৬ । 
  • আবেদনকারী ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক তার শরীরে শরীরে কোন প্রকার নেশাদার দ্রব্য কিংবা অ্যালকোহল থাকলে তাকে বাতিল করে দেয়া হবে । 
  • আবেদন করে যদি কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তার আবেদন গ্রহণ করা হবে না ।  

একজন তরুণ বা তরুনীর পাইলট হওয়ার  জন্য অবশ্যই উপরুক্ত যোগ্যতাগুলো থাকতে হবে । তা না হলে তারা পাইলট পদে আবেদন করতে ব্যর্থ হবে । 

পাইলট হতে কি যোগ্যতা লাগে

অনেকের একটি বিশেষ  শখ বা স্বপ্ন পাইলট হওয়া । পাখির মতো আকাশে উড়তে কার না মনে চায় ? সকলের মনে এই আশাটি জাগে যে আমিও যদি উড়তে পারতাম সেই বিশাল আকাশে । কিন্তু এটা শুধু স্বপ্নই থেকে গেলে চলবে না । সামর্থ অনুযায়ী এটাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে । তবেই  স্বপ্ন সার্থক হবে । 

পাইলট দুই ধরনের হয়ে থাকে, একটি হলো সামরিক এবং আরেকটি হলো বেসামরিক । সামরিক পাইলট বলতে বুঝায় নৌ বাহিনী, বিমানবাহিনী এবং সেনাবাহিনীতে যে সকল পাইলট নিয়োজিত থাকে তাদেরকে । এবং বেসামরিক পাইলট হল যারা এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে নিয়োজিত রয়েছে । তবে সামরিক হোক কিংবা বেসামরিক হোক, পাইলট হতে হলে অবশ্যই যোগ্যতার প্রয়োজন । 

বাংলাদেশের এয়ারলাইন্স বেসামরিক বিমান চালানোর যাবতীয় কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে  Civil Aviation Authority Of Bangladesh ( CAAB ) । এ প্রতিষ্ঠানটি যাবতীয় বেসামরিক বিমান চালানো এবং বিমান প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন । এর অধীনে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি সাহায্য নিতে পারেন এবং যোগাযোগ করে আপনি আপনার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবেন । 

সরকারিভাবে পাইলট হওয়ার উপায়


একজন ব্যক্তির সাধারণভাবে যদি পাইলট হতে চায় তবে তাকে অবশ্যই কিছু বেশি কোর্স করতে হবে ।এই কোর্সের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি পাইলট হতে কি কি জানতে হয় বা কি কি ধারণা লাভ করতে হয় তা বিশেষভাবে জানতে পারবে । এবং এ কোর্সের পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে এসএসসি ও এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে । এবং এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ হতে হবে । 

তবে যদি কারো স্নাতক পাস থাকে তবে তার সে যোগ্যতা কে বিশেষভাবে মূল্যায়ন দেওয়া হবে ।পাইলট পদে আবেদনকারীর ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৭ বছর এবং এর উর্ধ্বে ২৫ বছর পর্যন্ত । তবে কারো যদি বয়স ১৭ বছর এর নিচে হয়ে থাকে তবে তিনি পাইলট পদে আবেদন করতে পারবেন না । এবং আবেদনকারীকে অবশ্যই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে, এবং ফিট থাকতে হবে । 

তবেই একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ সঠিক যোগ্যতার অধিকারী হিসেবে পাইলট পদে আবেদন করতে পারবে । তবে যদি কারো যোগ্যতা এর বাইরে হয়ে থাকে তবে তাকে পুনরায় সম্পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করে পাইলট পদে আবেদন করতে হবে । 

পাইলট পদে আবেদনের জন্য কোর্স 

পাইলট পদে আবেদন করার জন্য কিছু বেশি কোর্স করা প্রয়োজন । কারণ কোর্স ছাড়া একজন ব্যক্তি পাইলট সম্পর্কে বা বিমান সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা লাভ করতে পারে না । এজন্য অবশ্যই বেশি কোর্স করতে হবে । অনেকে মনে করেন যে, চাইলেই হয়তো এ কোর্স করা সম্ভব । কিন্তু আপনাদের ধারণা একদম ভুল । চাইলেই পাইলট পদে কোর্স করা সম্ভব নয় । 

পাইলট পদে কোর্স করতে চাইলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাডেমিতে পাইলট পদে কোর্স করার জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে । সে ভর্তি পরীক্ষায় যদি উত্তীর্ণ হতে পারে, এবং ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে তবেই মিলবে  পাইলট কোর্সের সুযোগ । আর যদি কেউ ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয় তবে তাকে সেই কোর্সটি করার জন্য সুযোগ দেওয়া হবে না । 

এ কোর্সটিতে  সুযোগ পাওয়ার জন্য তিনটি ধাপে পরীক্ষা দিতে হয় । ধাপ তিনটি হলঃ 

  • লিখিত পরীক্ষা
  • মৌখিক পরীক্ষা
  • এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা , তবে এর পাশাপাশি কম্পিউটারে দক্ষ হলে বেশ ভালো । 

পাইলট কোর্সের সুযোগ পাওয়ার পর পরেই শুরু হবে মূল প্রশিক্ষণ । এমন প্রশিক্ষণ টি আবার তিন ভাগে বিভক্ত । ১. গ্রাউন্ড কোর্স, ২. প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স লাইসেন্স এবং ৩.  কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স । এই কোর্সটি সম্পূর্ণ শেষ করতে সময় লাগবে তিন বছর । এই তিন বছরে একজন ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করে দেওয়া হয় একজন পাইলট হিসেবে । 

গ্রাউন্ড কোর্সে শেখানো হয় বিমানের থিওরি সম্পর্কে । যেমন ঃ বিমানের কারিগরি শিক্ষা, এয়ার ল, এয়ারক্রাফট জেনারেল নলেজ, হিউম্যান পারফর্মেন্স এন্ড লিমিটেশন, নেভিগেশন, অপারেশনাল প্রসিডিউর, ফ্লাইট পারফরমেন্স এন্ড প্ল্যানিং এবং প্রিন্সিপাল অব ফ্লাইট সম্পর্কে বিভিন্ন থিওরি শেখানো হয় । 

গ্রাউন্ড কোর্স শেষ হওয়ার পর প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স এর জন্য প্রশিক্ষণ শুরু হয় । এখানে সিভিল এভিয়েশন স্টুডেন্ট পাইলট পদে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয় । আবেদন করার পর সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ( CAAB ) পরীক্ষা নেয় । সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এসপিএল দেওয়া হয় । 

এই এস পি এল দেওয়ার মানে হলো এ এস পি এল লাইসেন্স পাওয়ার পর ৪০ থেকে ৫০ ঘন্টা পর্যন্ত বিমান চালানোর অনুমতি পাওয়া যায় । এরপর পাওয়া যায় পি পি এল , যেটাকে বলা হয় প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স এর আবেদনের অনুমতি । প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করার পর এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। 

তারপর পাওয়া যায় প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স । তবে এই লাইসেন্স দিয়ে বাণিজ্যিক কোনো বিমান চালানো যায় না । এটা শুধু প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স অর্থাৎ প্রাইভেট বিমান চালানো যায়। বাণিজ্যিক বিমান চালানোর জন্য প্রয়োজন কমার্শিয়াল লাইসেন্স । কিন্তু যদি কমার্শিয়াল লাইসেন্স পেতে চান তাহলে ১৫০ থেকে ২০০ ঘন্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে । 

তবে যদি এই অভিজ্ঞতা থাকে এবং এর মাধ্যমে কমার্শিয়াল লাইসেন্স অর্জন করতে পারেন তবে যেকোনো এয়ারলাইন্সে চাকরি করা সম্ভব । কমার্শিয়াল লাইসেন্স এর মাধ্যমে যেকোনো বাণিজ্যিক বিমান চালাতে পারবেন । আশা করি বুঝতে পেরেছেন পাইলট হতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন। 

পাইলট কোর্স কোথায় করা যায় 


সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ - Civil Aviation Authority Of Bangladesh ( CAAB ) এর অধীনে বিভিন্ন ধরনের পাইলট কোর্স এর প্রতিষ্ঠান গুলো কোর্স করে থাকেন । দেখে নিন সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ঃ 

  • সিভিল এভিয়েশন একাডেমী ট্রেনিং সেন্টার ।
  • বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টার । 
  • গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমী অন্যতম ।
  • বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি এন্ড ফ্লাইং এভিয়েশন লিমিটেড ।
  • আরিরাং এভিয়েশন লিমিটেড । 

এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলো পাইলট কোর্স করিয়ে থাকেন । তবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো সবগুলো বাংলাদেশের মধ্যেই । এবং সবগুলো প্রতিষ্ঠান ( CAAB ) এর অধীনে । 

সরকারিভাবে পাইলট হওয়ার খরচ

পাইলট হওয়ার জন্য বেসিক কিছু ্ কোর্স করতে হয় । কোর্সগুলো করা বাধ্যতামূলক । কারন এই কোর্সের মাধ্যমে পাইলট সম্পর্কিত সকল ধারণা অর্জন করা সম্ভব এবং পাইলট যে সকল লাইসেন্স গুলো রয়েছে সেই লাইসেন্সগুলো পাওয়া যায় এই কোর্সের মাধ্যমে । এ কোর্সটি করানো হয় বাংলাদেশেই । 

কোর্সটি সম্পূর্ণ শেষ করতে সময় লাগে তিন বছর । এবং এই কোর্স টি করার জন্য দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যয় হয় ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা । তবে এই টাকার পরিমাণ প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী কমতে বা বাড়তে পারে । তবে এই কোর্সের একটি অসুবিধা রয়েছে , সেটি হল কোর্সটি করার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা টাকা রেডি করে রাখতে হয় । 

আরও পড়ুন ঃ পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে নতুন পাসপোর্ট কিভাবে বানাবো

কারণ টাকার কারণে অনেক সময় রিয়েল টাইম ফ্লাইং আটকে থাকে । পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা দেওয়ার পরেই এই সুযোগ পাওয়া যায় । এই কারণে এই কোর্সটি সম্পূর্ণ করতে এত লম্বা সময় লেগে যায় । 

লেখক এর শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুগণ আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে জানতে পেরেছেন সরকারিভাবে পাইলট হওয়ার উপায় - ২০২৪ এবং পাইলট হওয়ার যোগ্যতা ও বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে । আশা করি আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে । আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন । এবং আপনার বন্ধু কিংবা নিকটবর্তী মানুষদের পাইলট সম্পর্কে জানতে সুযোগ করে দিবেন । 

এ ধরনের বিভিন্ন আর্টিকেল পেতে এই ওয়েবসাইটটি ফলো ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখুন । আশা করি ভালো থাকবেন । 

" ধন্যবাদ " 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url