দাঁত শিরশির করার কারণ ও প্রতিকার

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুগণ । আপনারা হয়তো দাঁতের শিরশিরানি নিয়ে চিন্তায় আছেন । এবং কিভাবে এর সমাধান পাওয়া যায় সে বিষয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করছেন । আজকের এই আর্টিকেলটিতে দাঁত শিরশির করার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । এছাড়াও কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁত শিরশির করে সে বিষয়েও জানতে পারবেন এই আর্টিকেলটি থেকে ।  


পোস্ট সূচিপত্র ঃ এই পোস্টের যে অংশ পড়তে চান নিচে ক্লিক করুন । 

আমাদের মাঝে অনেকের এই সমস্যাটি রয়েছে । এজন্য এই সমস্যার থেকে সমাধান পেতে আজকের এই আর্টিকেলটি । দাঁতের শিরশিরানি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন । 

দাঁত শিরশির করার কারণ ও প্রতিকার

আমরা প্রায় একটা বিষয় লক্ষ্য করিয়ে যখন আমরা ঠান্ডা কিছু খায় অথবা মিষ্টি জাতীয় কোন খাবার তখনই আমাদের তাতে শিরশির অনুভূত হয় । শিরশির অনুভূতি হওয়ার কারণে আমরা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পারি না । আমরা দাঁতের যে অংশটা দেখতে পাই তা হচ্ছে এনামেল । অর্থাৎ শরীরের সবথেকে শক্ত অর্গান এই এনামেল । 

দাঁতের একটি আবরণ হলো এনামেল । আমাদের দাঁতের এনামেল যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখনই আমরা দাঁতে শিরশির অনুভূতি পায় । রাতের এই শিরশির করার কারণ হলো এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ।এই দাঁতের শিরশিরানীকে আবার সেনসিটিভিটিও বলা হয়ে থাকে । আমাদের দাঁত ক্ষতির মধ্যে পড়ার আগেই এর প্রতিরোধ করতে হবে । 

দাঁত শিরশির করার কারণ

  • আমরা যখন ঠান্ডা কিংবা মিষ্টি জাতীয় খাবার খায় তখন দাঁতের শিরশির অনুভব হয় । 
  • আমাদের দাঁতের যখন এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন আমাদের দাঁত কমজুরি হয়ে পড়ে, এবং সেখান থেকে সেনসিটিভিটি বা শিরশিরানির সৃষ্টি হয় । 
  • ব্রাশ করার সময় শক্ত এবং বড় ব্রাশ ব্যবহার করার কারণে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে । 
  • খাবারের বাইরে বদ অভ্যাস থাকলে দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে । 
  • আঠালো জাতীয় কোন খাবার খাওয়ার পর তা যদি দাঁতের লেগে থাকে, যদি দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার না করা হয় তাহলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায় এবং সেনসিটিভিটি তৈরি হয় । 
  • মাড়িতে পাথর জমার কারণে সেনসিটিভিটি তৈরি হতে পারে । 
  • নিয়মিত পান সুপারি খাওয়ার কারণে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায় ।  বিশেষ করে সুপারি বেশি ক্ষতিকর দাঁতের জন্য । 
  • অনেক সময় নিয়ে দাঁত ব্রাশ করার কারণে দাদ অতিসংবেদনশীল হয়ে পড়ে । এবং পরবর্তীতে দাতের শিরশিরানি অনুভূত হয় । 


প্রতিরোধ

  • দাঁতের শিরশিরানি থেকে মুক্তি পেতে হলে সব সময় দাঁত পরিষ্কার রাখতে হবে । 
  • দাঁত ব্রাশ করার সময় ছোট এবং নরম ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে । এবং দাঁতের চারিদিক ভালো হবে ব্রাশ করতে হবে । 
  • আঠালো জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে । চুইংগাম, পান, সিগারেট এ সকল জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে । কারণ এগুলোর কারণে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায় । 
  • দাঁতে পাথর জমার কারণে দাঁত শিরশির করে । দাঁতের পাথর জমা বন্ধ করার জন্য সকালে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্রাশ করতে হবে । 
  • ভালোভাবে দাঁতের যত্ন নিতে হবে । তা না হলে পরবর্তীতে দাত নিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হবে । 
  • ভালো টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে । তাহলে দাঁতের শিরশিরানী দূর হয়ে যাবে । 

কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁত শিরশির করে

দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা এবং দাঁত শিরশির করার কারণ আমাদের শরীরে ভিটামিন এর অভাব । মানব দেহে যদি সঠিক পরিমাণে ভিটামিন না থাকে তাহলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । ঠিক দাঁতের ক্ষেত্রেও একই বিষয় । শরীরে ভিটামিন সি এর অভাবে দাঁতে সেনসিটিভিটি তৈরি হয় এবং দাঁত শিরশির করে । 

ভিটামিন - সি 

এছাড়াও ভিটামিন সি মাটি শক্ত করতে সাহায্য করে এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেয় ।ভিটামিন সি এর অভাবে মাড়ির প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং দাঁত থেকে রক্ত পড়া শুরু হয় । এজন্য আমাদের নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত । 

ভিটামিন সি যে সকল খাবারে থাকে, পেয়ারা, লেবু, কমলা, আমলকী ইত্যাদি টক জাতীয় ফলে ভিটামিন সি থাকে । 

ভিটামিন - বি

এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি ভিটামিনের অভাবে আমাদের দাঁতের সমস্যা দেখা দেয় । যেমন ভিটামিন বি মুখের ঘা এবং জিহ্বার প্রদাহ থেকে আরাম দেয় । এজন্য আমাদের শরীরে ভিটামিন বি এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । যে সকল খাবারে ভিটামিন বি রয়েছে আমাদের উচিত নিয়মিত সে সকল খাবার গুলো খাওয়া । 

ভিটামিন বি পাওয়া যায় মটরশুঁটি, মাংস, সবুজ শাক-সব্জিতে । 

ভিটামিন - ডি

ভিটামিন ডি এর অভাবেও দাঁতের সমস্যা দেখা দেয় । ভিটামিন ডি মানব দেহের হাড় এবং দাঁতের জন্য বেশ কার্যকরী । দাঁতের গোড়া মজবুত করতে এবং দাঁত শক্ত করতে সাহায্য করে ভিটামিন ডি । ভিটামিন ডি এর কারণে মাড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । এবং মাড়ি ভালো থাকে । 

ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদিতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় । 

ভিটামিন - কে

ভিটামিন কে এর অভাবে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে । শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে ভিটামিন কে । আমরা দেখি অনেক সময় দাঁত ব্রাশ করার সময় দাঁত থেকে রক্ত পড়ে । এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের ভিটামিন কে জাতীয় খাবার খাওয়া খুবই জরুরী । 

ভিটামিন কে পাওয়া যায় সয়াবিন তেলে, সবুজ শাক সব্জিতে এবং আরও অনেক খাবারে পাওয়া যায় ভিটামিন কে । 

দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়


দাঁতের শিরশিরানি এবং সেনসিটিভিটি থেকে আরাম পেতে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারেন । নিম্নে উল্লেখিত ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করে দাঁতের শিরশির রানী নিমিষে দূর করুন । এবং দাঁত সুস্থও সবল করে তুলুন । 

লবণ পানি

প্রতিদিন দাঁত মাজার পর লবণ পানি দিয়ে কুলি করতে পারেন । এতে করে দাঁতের শিরশিরানি দূর হয়ে যাবে । এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে সামান্য পরিমাণ লবণ মিশিয়ে নিন । এবং সেগুলো ভালোভাবে মেশানো হয়ে গেলে সেই লবণ পানি দিয়ে কুলি করুন । দাঁতের শিরশিরানি দূর করার খুব ভালো একটি ঘরোয়া উপায় হল লবণ পানি । 

আরও পড়ুন ঃ ওজন কমাতে লেবু পানি খাওয়ার নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন


ভ্যানিলা এক্সট্রাক্ট

দাঁতের শির শিরানি দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্ট । কারণ ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্ট ব্যবহার করার ফলে দাঁতের এনামেল ভালো থাকে এবং দাঁতের শিরশিরানি দূর করতে সাহায্য করে । সামান্য পরিমাণ তুলায় সামান্য পরিমাণ ভ্যানিলা নিয়ে দাঁতে লাগিয়ে রাখুন । 

 কিছুক্ষণ পর সেগুলো বের করে ভালো করে কুলি করে নিন । নিয়মিত বেশ কিছুদিন এরকম করতে থাকলে দেখবেন দাঁতের শিরশিরানি দূর হয়ে গেছে । 

গ্রীন টি মাউথ ওয়াশ 

খুব সহজেই বানিয়ে নিন গ্রিন টি মাউথ ওয়াশ । একটা গ্লাসে  গ্রিন টি নিয়ে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করুন ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত । তারপর সেই চা দিয়ে মাউথ ওয়াশ হিসেবে কুলি করুন । অন্ততপক্ষে দিনে দুইবার এই পদ্ধতিটি কাজে লাগাবেন । তাহলে দাঁতের শিরশিরনী দূর হয়ে যাবে । 

ঘরোয়া টুথপেস্ট

দাঁতের শিরশিরানি দূর করার জন্য ব্যবহার করুন লেবুর রস, লবঙ্গের পেস্ট,  হলুদ, এবং সরিষার তেলের পেস্ট । প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করার সময় এগুলোর যেকোনটি নিয়ে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ভালোভাবে দাঁতের চারিদিক মেসেজ করুন । এতে করে দাঁতের মাড়ি ভালো থাকবে এবং দাঁতের শিরশির অনুভূতি দূর হয়ে যাবে । 

 ক্যাপসিকাম

ক্যাপসিকাম হলো একটি মরিচের নাম । আমরা জানি মরিচ সাধারণত ঝাল হয়ে থাকে । তবে এই মরিচেই আপনার দাঁতের শিশির অনুভূতি দূর করতে পারে । মরিচ শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই ।ক্যাপসিকামে থাকে ক্যাপসাই সিন নামক একটি উপাদান । এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে । এটি ব্যবহার করার সময় খুব সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে । যেহেতু এটি একটি মরিচ যেহেতু হালকা সমস্যা বা ঝাল লাগতে পারে । 

দাঁতের মাড়ি ফোলা ও ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

দাঁতের মাড়ি ফোলা এবং দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য দুটো উপায় অবলম্বন করতে পারেন । এ দুটি উপায় আপনি ঘরে বসেই কাজে লাগাতে পারবেন । ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজে দাঁতের মাড়ি ফোলা এবং ব্যথা কমানো সম্ভব । আপনিও যদি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে নিম্নে উল্লেখিত উপায় দুটি অবলম্বন করুন । 

১. লেবু পানি

আমরা সকলেই জানি লেবু এক ধরনের উপকারী ফল । লেবুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি । যা দাঁতের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে । ঘরে বসে আপনি লেবু পানি দিয়ে ঔষধ তৈরি করে নিন । এক গ্লাস গরম পানিতে একটি লেবু নিয়ে লেবুর রস এবং গরম পানি একত্রে ভালো করে মিশ্রণ তৈরি করে নিন । 

লেবু এবং গরম পানির মিশ্রণ তৈরি করার পর তা দিয়ে কুলি করুন । প্রতিদিন অন্ততপক্ষে দুইবার কুলি করবেন । তাহলে দাঁত পরিষ্কার থাকবে এবং শক্ত ও মজবুত থাকবে । 

আরও পড়ুন ঃ ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা - ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম


২. লবণ পানি

মাড়ি ফোলা এবং মাড়ির ব্যথা থেকে আরাম পেতে নিয়মিত লবণ পানি ব্যবহার করুন । এক গ্লাস গরম পানির সাথে এক টেবিল চামচ লবণ মিশিয়ে নিন । এবার সেই লবন পানি দিয়ে কুলি করুন । প্রতিদিন অন্ততপক্ষে দুই থেকে তিনবার কুলি করতে হবে । তাহলে আপনার মাড়ির ফোলা এবং মাড়ি ব্যথা বন্ধ হয়ে যাবে । 

হলুদ 

মাড়ি ফোলা এবং ব্যথা দূর করতে হলুদ ব্যবহার করতে পারেন । হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন । যার ভেতর থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদান যেকোনো ফোলা বা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে । মাড়ির ফোলা এবং ব্যথা দূর করতে নিয়মিত এই ঘরোয়া উপায়টি অবলম্বন করুন । আশা করি এখান থেকে ভালো ফলাফল পাবেন । 

চা চামচের এক চামচ হলুদের গুঁড়ো নিয়ে নিন । এবার এক চা চামচের এক - চতুর্থাংশ হলুদের গুঁড়ো নিয়ে নিন । এরপর সামান্য পরিমাণ, কুসুম গরম পানিতে দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন । হলুদ ও পানির পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে তা ৫ মিনিট দাঁতে লাগিয়ে রাখুন । ৫ মিনিট রাখার পর হালকা গরম পানি দিয়ে কুলি করে ফেলুন । 

প্রতিদিন কমপক্ষে দুইবার এই কাজটি করতে হবে । তাহলে দাঁতের মাড়ি ফোলা এবং ব্যথা খুব দ্রুত কমে যাবে । যাদের এ সকল সমস্যা রয়েছে তারা এই উপায় অবলম্বন করতে পারেন । আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন । 

শেষ কথা 

প্রিয় পাঠকগন , আজকের এই আর্টিকেলটির মূল বিষয় হলো দাঁত শিরশির করার কারণ ও প্রতিকার ।পুরো আর্টিকেলটিতে দাঁত শির শির করার কারণ এবং প্রতিকারসহ আরো অনেক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । আশা করে আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে এবং আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পেয়েছেন । 

আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন । নিজে নিজের প্রতি যত্নবান হয়ে উঠুন এবং অপরকে ও সচেতন করে তুলুন । 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url