রাসেল ভাইপার সাপ কোন কোন জেলায় অবস্থান করছে - বিস্তারিত

প্রিয় বন্ধুগণ, বর্তমান সময়ে মানুষকে সবসময় আতঙ্কিত করে রাখছে বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার ।আপনি যদি এই সাপের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান এবং রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব কোন কোন জেলায় তাহলে আর্টিকেলটি পুরো পড়তে থাকুন । 

রাসেল-ভাইপার-সাপ-কোন-কোন-জেলাই-অবস্থান-করছে-বিস্তারিত

আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি জানতে পারবেন রাসেল ভাইপার সাপ কোন কোন জেলায় অবস্থান করছে এবং এর উপদ্রব কতটা বেড়েছে সে সকল বিষয়ে জানতে পারবেন এই আর্টিকেলটি  থেকে । 

পোস্ট সূচিপত্র ঃ এই পোস্টের বিভিন্ন অংশ পড়তে নিচে ক্লিক করুন । 

ভূমিকা

বিশ্বের বিষাক্ত সাপের মধ্যে অন্যতম একটি হলো রাসেল ভাইপার । প্রতিনিয়ত বাড়ছে এর উপদ্রব এবং মানুষ সবসময় আতঙ্কিত থাকছে এই সাপের ভয়ে । এই বিষধর সাপ কামড় দিলে কি হয় এবং এইসাপ  সম্পর্কে আরো তথ্য জানতে পারবেন এখান থেকে । আরো যে সকল বিষয় জানতে পারবেন সেগুলো হলো রাসেল ভাইপার সাপের বংশবিস্তার সম্পর্কে । 

এবং এই বিষধর সাপ কামড়ালে কি হয়, রাসেল ভাইপার সাপ কোন দেশের ইত্যাদি সকল বিষয় জানতে পারবেন । চলুন শুরু করা যাক এই বিষধর সাপ সম্পর্কে । এবং জেনে নেওয়া যাক এর উপদ্রব দিন দিন কেন বাড়ছে । 

বেড়েছে রাসেল ভাইপার উপদ্রব 

বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে বেড়েছে রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব । বাংলাদেশের আনাচে কানাচে বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জের মানুষজন আতঙ্কিত এ বিষধর সাপের কারণে । এই সাপের দেখা মিলেছে অনেকদিন পর । এখন থেকে প্রায় ১১ বছর আগে চন্দ্রবোড়া নামে এসব প্রথম দেখা যায় ।

 চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী জানা যায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ানোর রোগীর । বর্তমানে আবারও ১১ বছর পর এই সাপের দেখা মিলেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় । এলাকার কৃষক ও অসাধারণ মানুষ এই সাপের আতঙ্কে চাষবাস করতে ব্যর্থ হচ্ছেন । গ্রামের ঘরগুলোতে এবং বাড়ির আশেপাশে চারিদিকে বংশবিস্তার করছে এই সাপ । 

আরও পড়ুন ঃ ক্যান্সার প্রতিরোধে ১৩ খাদ্য - ক্যান্সার প্রতিরোধক সবজি

বর্তমানে বাংলাদেশের ৩২ টি জেলায় বেড়েছে এ বিসধর সাপের উপদ্রব । এই সাপের কারণে মানুষ সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে । এই বিষয়টির সাথে সাথে আরও একটি বিষয় জানিয়েছেন সাপের বিষ নিয়ে গবেষণা কারী প্রতিষ্ঠান যে চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে সামাজিক ও যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে । 

আসলে এই বিষয়টি কতটুকু সঠিক এবং কতটুকু বেঠিক তা এখনো জানা যায়নি । তবে বাংলাদেশের ৩২ টি জেলায় এর উপদ্রব বেড়েছে বলে জানা গেছে । এবং এলাকার মানুষজনসহ সকলকে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । 

রাসেল ভাইপার সাপ কোন কোন জেলায়

চট্টগ্রামের মেডিকেল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টার থেকে জানা যায় যে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে নয়টি জেলায় চন্দ্রবোড়া সাপের দেখা মেলে । এর পরবর্তীতে ৯ টি থেকে ১১ টি জেলায় এর উপদ্রব বেড়েছে বলে জানা যায় ২০১৮ সালে । এর পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে এই সাপের উপদ্রব বেড়েছে ২৩ টি জেলায় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ভেনম রিসার্চ সেন্টার । 

তবে বর্তমান সময়ে ২০২৪ সালে এর উপদ্রব আরো বেড়ে এখন পর্যন্ত মোট ৩২ টি জেলায় এর আতঙ্ক ছড়িয়েছে । ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যে সকল জেলা গুলোই এই সাপের উপদ্রব ঘটেছে সেগুলো হল ঃ নীলফামারী, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া , রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, যশোর, নাটোর, মানিকগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট । 

এছাড়াও  আরো রয়েছে চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গ, মেহেরপুর,  ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, , ভোলা , লক্ষীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী ঝালকাঠি এবং বরগুনা এই ৩২ টি জেলায় বর্তমানে চন্দ্রবোড়া যার বর্তমান নাম রাসেল ভাইপার এর উপদ্রব বেড়েছে । 

এইসব পানিতে থাকতে বেশি পছন্দ করে । পদ্মা নদী ও তার শাখা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে এই সাপের বিস্তার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় । এ তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টার ।এইসব পানিতে বেশ ভালো সাঁতার কাটতে পারে বলে জানিয়েছেন সাপ বিশেষজ্ঞরা । বর্তমানে এর উপদ্রব যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে সাপে কাটার রোগীর সংখ্যা । 

এজন্য আমাদের সব সময় সতর্কতার সাথে পথ চলতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে । যেই জেলাগুলোতে এর উপদ্রব বেশি সে সকল জেলার মানুষদের বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য । 

রাসেল ভাইপার সাপের বংশবিস্তার 


চন্দ্রবোড়া বিষধর সাপের গায়ের রং বাদামী অথবা হলুদ কালার । বাদামি ও হলুদের সংমিশ্রণ রয়েছে এই সাপের পুরো শরীরে । এবং এই সাপের উপর ডিম্বাকৃতির গোল গোল বাদামি কালার ফোটা রয়েছে । এই সাপের গায়ের গোলাকৃতি দেখে মনে হবে যেন সাপের গায়ে শিকল তৈরি করা হয়েছে । সাপ বিশেষজ্ঞদের মতে জানা যায় প্রায় সকল সাপ ই ডিম পাড়ে । 

কিন্তু চন্দ্রবোড়া সাপ পেটেই ডিম ফুটায় এবং সরাসরি পেট থেকে বাচ্চা দেয় । অন্যান্য সাপ ডিম পাড়ে এবং পরবর্তীতে সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে । কিন্তু চন্দ্রবোড়া সাপের পেটের মধ্যেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় । বিশেষ করে এই সাপের পথ চলা এবং চলাচল পানিতে । পানিতে চলা বেশি পছন্দ করে । 

এই সাপের উপদ্রব দিন দিন বেড়ে চলার কারণ হলো বাংলাদেশের ভূখণ্ডের পরিবর্তন । বর্তমানে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের বনজঙ্গল কেটে ফেলা হচ্ছে । এতে করে বন জঙ্গলে থাকা পশুপাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং বিষধর সাপগুলো যেদিকে পারছে আশ্রয় গ্রহণ করছে । বিশেষজ্ঞরা জানান গুইসাপ, পেঁচা া এবং বিজি এদের প্রধান শিকার ছিল চন্দ্রবোড়া সাপ । 

কিন্তু বন জঙ্গল উজাড় হওয়ার পর এগুলো আর তাদের আবাসস্থলে থাকে না । যার কারণে এই সাপ শিকার হয় না এবং প্রতিনিয়ত বংশবিস্তার করে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে । শিকার না হওয়ার কারণে এই সাপের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে । এই সাপ একসঙ্গে অনেকগুলো বাচ্চা দিতে সক্ষম হয় । এই সাপ বিশেষ করে জন ও জুলাই মাসের দিকে বাচ্চা দিয়ে থাকে । 

রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয় 

রাসেল ভাইপার একটি বিষধর সাপ । এই বিষাক্ত সাপ যদি মানুষকে কামড় দেয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব এর চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে । যদি চিকিৎসা গ্রহণে দেরি হয় কিংবা নির্ধারিত সময় পার হয়ে যায় তাহলে- এতে আমি মৃত্যুর ঝাকি অনেকটা বেড়ে যায় ।  এবং যে অংশে কামড় দেয় সে অংশ একেবারে নষ্ট হয়ে যায় ও সেখানকার আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায়। 

যদি কোন ব্যক্তিকে এই সাপে কামড় দেয় তাহলে তার কিছু করণীয় রয়েছে । এ করণীয় গুলো কামড় খাওয়া ব্যক্তির মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী । নিয়মগুলো হল ঃ 

যে অংশে সাপে কামড় দিয়েছে সে অংশ বেশি নাড়াচাড়া করানো যাবে না । যদি এই সাপে কারো পায়ে কামড় দেয় তবে সে ব্যক্তির হাঁটাচলা করা যাবে না এবং যদি শরীরের অন্য অংশে কামড় দেয় তবে সে অংশ নড়াচড়া করা যাবে না । এরপর যে অংশে কামড় দিয়েছে সে অংশ সাবান দিয়ে আলতো করে পরিষ্কার করতে হবে আর না হয় পাতলা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে । 

আরও পড়ুন ঃ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ যেনে নিন

কামড় দেয়া অংশে কোন প্রকার কাটা কোটা কিংবা যান্ত্রিক কোনো উপায় প্রয়োগ করা যাবে না । আক্রান্ত স্থানে কাটা কিংবা সুই ফোটানো যাবে না । যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে নিতে হবে । কারণ এই সাপের বিষ খুব দ্রুত প্রবাহিত হয় । এজন্য যত দেরি হবে রোগির মৃত্যুর ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পাবে । নিকটবর্তী কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে এর প্রতিষেধক ঔষধ সংগ্রহ করে রাখবেন । 

যাতে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই সেখানকার ব্যবস্থা নিতে পারেন । খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং জঙ্গল ঝোপে ঝাড়ে যাওয়া যাবে না । কারণ সাপ ঝোপ ঝাড় জঙ্গল এসব জায়গা বেশি পছন্দ করে । খুব সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে হবে । যদি বাঁচতে চান এই সাপের হাত থেকে । 

রাসেল ভাইপার কামোড় এড়াতে করণীয় 

যে সকল জায়গাতে রাসেল ভাইপার দেখা মিলেছে সে সকল জায়গাতে না যাওয়াই উচিত । তবে প্রয়োজনে সতর্কতার সাথে চলাচল করতে হবে । লম্বা ঘাস, ঝোপঝাড়, ফসলের জমির পাশ দিয়ে যাতায়াতের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে । ফসলের জমিতে কিংবা মাঠে-ঘাটে কাজ করার সময় বুট পরিধান করতে হবে । 

রাতে চলাচল করা বন্ধ করতে হবে । তবে যদি প্রয়োজনীয় তা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই টর্চলাইট সঙ্গে নিয়ে চলাচল করতে হবে । বাড়ির আশেপাশে জঙ্গল ঝোপঝাড় থাকলে  সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে । আমাদের গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষ খড়ি দিয়ে রান্না করে । এ খড়ি কিংবা জ্বালানি সরানোর সময় খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে । 

সাপ দেখা মাত্রই তাকে মারতে যাওয়া একদম বোকামি । একা একা কোন কিছু করতে যাবেন না । এতে বিপদে পড়ে যাবেন । এজন্য যদি কারো সামনে এই সাপের দেখা মিলে তবে জাতীয় হেল্প লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে । আশেপাশের মানুষজনকে জানাতে হবে । এবং সব সময় সতর্কতার সাথে কাজকাম চলাফেরা করতে হবে । 

শেষ কথা 

প্রিয় পাঠক গন , এই আর্টিকেলটিতে রাসেল ভাইপার সাপ কোন কোন জেলায় অবস্থান করছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এ আর্টিকেলটিতে । এছাড়াও বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে এই আর্টিকেলে । আশা করি আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন । 

সাপে কামড় দিলে করনীয় কি, সাপের কামড় এড়াতে করণীয় ইত্যাদি আরো অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন এখান থেকে । আশা করি আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে । আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন । এবং সকলকে রাসেল ভাইপার হাত থেকে বেঁচে থাকতে সচেতন করুন । ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ । 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url