রেমিট্যান্স অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান ২০২৪ বিস্তারিত দেখুন

 বর্তমানে রেমিটেন্স অর্জনের বিষয়টি নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক মতভেদ এবং কথোপকথন রয়েছে । রেমিটেন্স নিয়ে যাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি । এই আর্টিকেলে রেমিটেন্স অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান ২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন । 

রেমিট্যান্স-অর্জনে-বাংলাদেশের-অবস্থান- ২০২৪ বিস্তারিত- দেখুন

বর্তমানে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ কোটা সংস্কার আন্দোলন চলল, সেই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে কত পার্সেন্ট রেমিটেন্স এসেছে তা জানতে পারবেন এখান থেকে । চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনা । 

পোস্ট সূচিপত্র ঃ র‍্যেমিটেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন । 

ভুমিকা 

বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের মানুষ প্রবাসের দিকে পাড়ি জমাচ্ছে । প্রবাসে থেকে প্রবাসীরা যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে তা বাংলাদেশে রেমিটেন্স হিসেবে পাঠায় । তবে বর্তমানে বাংলাদেশে কি পরিমান রেমিটেন্স এসেছে এবং কোন কোন দেশ থেকে প্রবাসীরা বাংলাদেশের রেমিটেন্স পাঠিয়েছে সে সকল কিছু এই আর্টিকেলটি থেকে জানতে পারবেন । 

এছাড়াও আরো যে বিষয়গুলো জানতে পারবেন সেগুলো হল বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আছে কোন দেশ থেকে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে কোন জেলায়, রেমিটেন্স বাংলাদেশ ২০২৪ জুলাই, রেমিটেন্স থেকে  সরকারের আই ইত্যাদি সকল কিছু জানতে পারবেন । এর জন্য পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন । 

রেমিট্যান্স অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান ২০২৪ 

বিশ্বব্যাংক গবেষণা করে এবং প্রবাসীদের রেমিটেন্স এর ওপর ভিত্তি করে জানিয়েছেন যে ২০২৪ সাল শেষে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ ২৩ বিলিয়ন ডলারের কাছে পৌঁছাবে । এ ধারণা দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক । বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ মাইগ্রেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায় । গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালেও বাংলাদেশ রেমিটেন্স বাই ২৩ বিলিয়ন ডলার । 

এবং এর ওপর ভিত্তি করে জানিয়েছেন ২০২৪ সালেও ২৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রেমিট্যান্স পাবে বলে আশা করা যায় । তবে বর্তমান ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সংকটের কারণে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানা যায় । এবং ২০২৪ সালের নতুন বছরে বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে পুরো দক্ষিণ এশিয়া রেমিট্যান্স পাবে ১৯৮ বিলিয়ন ডলার । 

এর মধ্য থেকে বাংলাদেশ পাবে ২৩ বিলিয়ন ডলার । ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি ৭.২  শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াবে ৪.৯ শতাংশে । রেমিটেন্সের মাত্রা কমে যাওয়ার পরও নিম্ন মধ্য আয়ের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে থাকবে দক্ষিণ এশিয়া । এবং এই দক্ষিণ এশিয়ার নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ দশ রেমিটেন্স প্রাপ্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশে থাকবে ৭ম । 

২০২৪ সালে বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস এবং রেমিটেন্স এর উপর ভিত্তি করে দক্ষিণ এশিয়ার যে সকল দেশগুলো রয়েছে তার মধ্যে ৭ম স্থানে থাকবে বাংলাদেশ । এ তথ্য বিশ্ব ব্যাংক সরাসরি জানিয়েছেন ।তবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থানে থাকবে ভারত । তো আশা করি বুঝতে পারলেন যে ২০২৪ সালে রেমিটেন্স অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান কত নম্বরে রয়েছে । 

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে কোন দেশ থেকে

সব থেকে বেশি বাংলাদেশী প্রবাসী থাকে সৌদি আরবে । তার পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের শীর্ষ রেমিটেন্স উৎস হিসেবে পরিণত হয়েছে । কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের দেশে বা দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চার গুণ বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে । এ সকল বাংলাদেশী যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত । 

যেহেতু প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাংলাদেশ ব্যাংকে এসে জমা হয় । সেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশী প্রবাসী রয়েছে । এবং সৌদি আরবে রয়েছে প্রায় ২০ লাখ । এরপরেও সৌদি আরবকে পিছনে ফেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শীর্ষ রেমিটেন্স প্রদান কারী দেশ । 

আরও পড়ুন ঃ পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে নতুন পাসপোর্ট কিভাবে বানাবো

অর্থাৎ সৌদি আরবের চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি রেমিটেন্স আসে বাংলাদেশ । বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও একটি তথ্যে জানা যায় যে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে যে রেমিটেন্স এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তা আগের বছরের সময়ের তুলনায় ১৬% বৃদ্ধি পেয়ে ৯৬৬ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে । 

কিন্তু সৌদি আরব থেকে পাঠানো রেমিটেন্স একই সময়ে সাড়ে ১৯ শতাংশ কমে ৯১০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে । বাংলাদেশ ব্যাংকের এই তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে বাংলাদেশের সব থেকে বেশি রেমিটেন্স আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে । যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ কম রয়েছে । 

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে কোন জেলায় 

বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলা থেকে মানুষ প্রবাসে গিয়ে বিভিন্ন কাজকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে ।তাদের এ কাজকর্মের আয় রেমিটেন্স হিসেবে বাংলাদেশ পাঠানো হয় । কিন্তু আমরা জানি না যে বাংলাদেশের কোন জেলাতে সব থেকে বেশি রেমিটেন্স আসে ? আশা করি এখন জানতে পারবেন যে বাংলাদেশের কোন জেলাতে সব থেকে বেশি রেমিটেন্স আসে । 

বাংলাদেশের সবচেয়ে রেমিটেন্স প্রাপ্ত জায়গা হল ঢাকা । যা পুরো বাংলাদেশের রাজধানী । ঢাকা বিভাগ রেমিটেন্সের দিক দিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে । এবং দ্বিতীয়তে রয়েছে চট্টগ্রাম এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিলেট বিভাগ । গত অর্থবছরে সর্বমোট প্রবাসী আয়ের মধ্যে ঢাকা বিভাগে এসেছে ১ হাজার ২৪ কোটি ডলার বা ৪৭ শতাংশ । 

এই ১ হাজার ২৪ কোটি ডলার এসেছে ঢাকা বিভাগের ১৩ টি জেলাতে । এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ টি জেলায় এসেছে ৫৯৬ কোটি ডলার । এবং সিলেট বিভাগের ৪ টি জেলায় রেমিটেন্স এসেছে  ২৪৭ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ । বাংলাদেশের এই ৩ টি বিভাগ  এগিয়ে রয়েছে প্রবাসী অর্থ আয়ের দিক দিয়ে । 

এর মানে বোঝা যায় বাংলাদেশের সব থেকে ঢাকা বিভাগে প্রবাসী বেশি এবং প্রতিবছর ঢাকা বিভাগের সব থেকে বেশি রেমিটেন্স আসে । এদিক দিয়ে অর্থাৎ রেমিটেন্সের দিক দিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে ঢাকা, দ্বিতীয় স্থানে চট্টগ্রাম এবং তৃতীয় স্থানে সিলেট বিভাগ । বাংলাদেশের সব থেকে বেশি রেমিটেন্স এই ৩ টি বিভাগে আসে । 

রেমিট্যান্স বাংলাদেশ ২০২৪ জুলাই 

রেমিট্যান্স-অর্জনে-বাংলাদেশের-অবস্থান- ২০২৪ বিস্তারিত- দেখুন

গত জুলাই মাসে ১৩ দিনের মধ্যে কোন রেমিটেন্স আসেনি বাংলাদেশে । জুলাই মাসের এই ১৩ দিন রেমিটেন্স না আসার মূল কারণ হলো বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন । তার পরেও জুলাই মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশের রেমিটেন্স আসে ৯৭ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলার । কিন্তু এ রেমিটেন্স বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে আসেনি বলে জানা যায় । 

এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকও রয়েছে । বাংলাদেশের ১০ টি ব্যাংকে এই জুলাই মাসের প্রথম ১৩ দিন এর মধ্যে কোন রেমিটেন্স এসে পৌঁছায়নি । এর মধ্যে রয়েছে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক । একটি বিশেষায়িত ব্যাংক । ৪ টি বেসরকারি ব্যাংক এবং ৪ টি বিদেশি ব্যাংক । এই সর্বমোট ১০ টি ব্যাংকে গত জুলাই মাসের প্রথম ১৩ দিন কোন রেমিটেন্স আসেনি । 

বাংলাদেশের পত্রিকা গুলোর মাধ্যমে জানা যায় যে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দীর্ঘ ৫ দিন দেশের ইন্টারনেট বন্ধ ছিল । এই ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক সেবার ( এম এস এস ) মাধ্যমে বাংলাদেশ বড় ধাক্কা পেয়েছে রেমিটেন্স সংগ্রহে । 

আরও পড়ুন ঃ ঘরে বসে আয় করুন ১৫০০০ - ২০০০০ টাকা প্রতি মাসে

রেমিটেন্সের এই নেতিবাচক প্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং রিজার্ভের উপরেও বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে । এই নিয়ে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার । এই কোটা সংস্কার আন্দোলনে শুধু ইন্টারনেট বন্ধই নয় শিক্ষার্থীরদের আন্দোলনের সৃষ্টির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবং বিভিন্ন কারণে গত জুলাই মাসে তেমন কোনো রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসেনি । 

অন্যান্য বছরের চেয়ে বা অন্যান্য মাসের চেয়ে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সব থেকে রেমিটেন্স কম এসেছে বলে জানা যায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে । বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা । যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিটেন্স । 

রেমিট্যান্স থেকে সরকারের আয় 

২০২৩ সালে প্রবাসীরা প্রায় ২১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে । প্রবাসীরা এই ডলার দেশে পাঠায় ব্যাংক এবং হুন্ডি পদ্ধতিতে ।  এই ব্যাংক ও হুন্ডি পদ্ধতি বিনিময় হারের ব্যাপক পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে । আর এ ব্যাপক পার্থক্যের কারণে যদিও দেশের অনেক মানুষ বিদেশে গিয়েছে কিন্তু রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হয়নি । 

তবে এর আগের বছরে ঠিক এই সময়ের তুলনায ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি । ২০২২ সালের একটি রেমিটেন্স তথ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক জানাই যে ২০২২ সালে রেমিটেন্স থেকে আয় হয়েছিল ২১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার । তবে বর্তমানে প্রবাসীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে । এবং রেমিটেন্সের পার্সেন্ট ও বৃদ্ধি পাচ্ছে । 

রেমিটেন্স থেকে সরকারের আয় হয় কিভাবে ? যখন কোন প্রবাসী রেমিটেন্স এর মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে টাকা পাঠায় তখন সে টাকা তার পরিবার যে কোন কাজে খরচ করে । তার টাকা একজনের কাছ থেকে অন্য জনের কাছে যায় । যেমন আমরা একটা জিনিস কিনি আমি তখন আমাদের কাছের টাকা বিক্রেতার কাছে যায় । 

আবার সে বিক্রেতা সেটা আগে কোন কিছু কিনে সে টাকা আবার অন্যজনের হাতে যায় । এভাবে লেনদেন হতে থাকে । আর এই লেনদেন যত বেশি হয় তত বেশি দেশের আর্থিক উন্নত হয় । তবে এ লেনদেনটা যদি বাইরের দেশের সাথে হয় তবে সেখান থেকে বেশি লাভ হয় । আর এই পদ্ধতির বিকল্প উপায় হল রেমিটেন্স । এভাবেই রেমিটেন্স থেকে সরকারের আয় হয় । 

শেষ কথা 

প্রিয় বন্ধুগণ আশা করি পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন । যদি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে অবশ্যই রেমিটেন্স ব্যাপারে কিছু তথ্য হলেও জানতে পেরেছেন । রেমিট্যান্স অর্জনে বাংলাদেশের স্থান কত তম, তারপর বাংলাদেশের কোন জেলায় সব থেকে বেশি রেমিটেন্স আছে , কোন দেশ থেকে বাংলাদেশের সব থেকে বেশি রেমিটেন্স আসে সকল কিছু জানতে পেরেছেন এই আর্টিকেলটি থেকে ।

আশা করে আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে ।  আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন । 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url